করোনার প্রকোপ কমতে পারে গরমে!
কুমিল্লা.টিভি
প্রকাশিত : ০৭:৪২ পিএম, ২৭ মার্চ ২০২০ শুক্রবার

ছবি-সংগৃহীত
প্রতিটি ভাইরাসের বেঁচে থাকা অনেকটা নির্ভর করে প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর। কোনো কোনো ভাইরাস কম তাপমাত্রায় বেশি সময় টিকে থাকতে পারে। আবার তাপমাত্রা বেশি হলে সহজে মারা যায়।
প্রতিটি সংক্রামক ব্যাধি ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এর গতি প্রকৃতি পাল্টায়। করোনার মতো ফ্লু সাধারণত শীতের সময় হয়। অন্যদিকে টাইফয়েড আসে গরমে। এখন তাই অনেকের ভাবনা, শীতে শুরু হওয়া করোনাভাইরাস কী তাহলে গরমে কমে যাবে?
গত বছরের মধ্য ডিসেম্বরে চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ে। এখন চীন ছাড়িয়ে এ ভাইরাস ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে বিস্তার লাভ করছে। এখন পর্যন্ত যেসব অঞ্চলে করোনা বড় আকারে ছড়িয়েছে সেসব শীত প্রধান অঞ্চল এবং ঠান্ডা পরিবেশেই এ ভাইরাস বেশি ছড়িয়েছে। ফলে করোনাভাইরাস জনিত রোগ গরমে থাকবে কিনা সে প্রশ্ন ক্রমশ জোরালো হচ্ছে।
১০ বছর আগে যুক্তরাজ্যের এডিনবরা ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর ইনফেকশাস ডিসিসের কেট টেপ্লশেন তিন ধরনের করোনাভাইরাসের নমুনা নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। এসব নমুনা আক্রান্ত রোগীদের কাছে থেকে নেওয়া হয়েছিল। এদের সবারই শ্বাসযন্ত্র আক্রান্ত হয়েছিল। সবক্ষেত্রে ভাইরাসে আক্রান্তের সময় ছিল ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল মাস।
সারা বিশ্বের ৫০০টি এলাকার করোনা সংক্রান্ত তথ্য নিয়ে একটি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তবে এটি এখনো অপ্রকাশিত বলে বিবিসির একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে ভাইরাসটির বিস্তারে তাপমাত্রা, বাতাসের গতি ও তুলনামূলক আর্দ্রতার সম্পর্ক আছে বলে মন্তব্য করা হয়েছে। গবেষকেরা অনুমান করেছেন, করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বের উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলের দেশগুলো কম আক্রান্ত হবে।
করোনা ‘এনভেলাপড গোত্রের ভাইরাস।’ এর অর্থ হলো, এ ভাইরাসের গায়ে এক ধরনের প্রলেপ থাকে। ঠান্ডায় এই প্রলেপ আরো শক্ত হয়ে ওঠে। তখন এ ভাইরাস বেশি সময় বেঁচে থাকতে পারে। আবার তাপমাত্রা বাড়লে এর গায়ের প্রলেপ তুলনামূলক কম সময়ে নষ্ট হয়ে যায়।
করোনাভাইরাসের সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন একটি ভাইরাস সার্স। ২০০৩ সালে সার্স মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার সময় দেখা যায়, ভাইরাসটি শীতল ও শুষ্ক পরিবেশে বেশি ছড়ায়। সেটি ২২ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় অন্তত পাঁচ দিন পর্যন্ত থাকত। তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা যত বেড়েছে সার্সের জীবনও তত স্বল্পায়ু হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডের এক গবেষণায় দেখা গেছে, করোনাভাইরাস এবার সেই সব অঞ্চলেই বেশি ছড়িয়েছে যেসব অঞ্চলে গড় তাপমাত্রা ৫ থেকে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবার এসব এলাকায় আর্দ্রতাও কম। এতেই কী বলে দেয়া যায় যে করোনা ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে তার পথ পরিবর্তন করবে না বা উষ্ণ অঞ্চলে ছড়াবে কম মাত্রায়?
করোনাভাইরাস একেবারে নতুন। এর গতিপ্রকৃতি এখনো ঠিক বুঝতে পারেনি কেউই। তবে ফ্রান্সের ইনস্টিটিউট অব হেলথ অ্যান্ড মেডিকেল রিসার্চের পরিচালক ভিক্টোরিয়া কোলিৎজার কথা হলো, বিমান পরিবহনে এ ভাইরাস এবার সারা বিশ্বে এত দ্রুত ছড়িয়েছে। তিনি বলেন, ‘ভিন্ন মৌসুমে ভিন্ন আচরণ করবে কোভিড-১৯; তা বলার মতো এখনো সময় আসেনি। তবে ভাইরাসের গতিপ্রকৃতি মৌসুমের পরিবর্তনে পরিবর্তিত হতেই পারে।
আবহাওয়া আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতাও ওপর প্রভাব ফেলে। আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি–র তারতম্য রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। শীতে মানুষ সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন ডি কম পায়। প্রতিরোধী ক্ষমতাও কমে। তবে গরম পড়লেই আমরা এর থেকে মুক্তি পাব, নিশ্চিত করে বলতে পারছে না কোনো গবেষণাই।’
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উষ্ণমণ্ডলীয় দক্ষিণ এশিয়ার একাধিক দেশে ছড়িয়েছে। তবে এর প্রকোপ শীতপ্রধান দেশের থেকে কম। বাংলাদেশ উষ্ণমণ্ডলীয় দেশগুলোর একটি। এখন তাপমাত্রা বাড়ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত সাত দিন ধরে তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়ছে। গত মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বুধবার ৩৫, গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এভাবে আরও বাড়বে দুই দিন।
আগামী দিনগুলোতে করোনাভাইরাসের প্রকোপ সামাজিকভাবে দূরত্ব বজায় রাখার কঠোর নীতির সফলতার ওপরই নির্ভর করবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সেখানে ঋতুর পরিবর্তনও একটা বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলেও তাদের ধারণা।